আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


মধুপুরে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর কলেজ ছাত্রী হত্যা, চালক, সুপারভাইজার ও তিন হেলপার গ্রেফতার

অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, নিজস্ব প্রতিবেদক :

টাঙ্গাইলের মধুপুরের বনাঞ্চলে চলন্ত বাসে কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ ও নৃশংসভাবে খুনের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বাস চালক, সুপারভাইজার ও তিন হেলপারকে গ্রেফতার করেছে।

মধুপুর থানা পুলিশ জানান, গত শুক্রবার রাত ১১টায় মধুপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর জঙ্গলের পঁচিশ মাইল এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক যুবতীর রক্তাত্ব লাশ উদ্ধার কওে টাঙ্গাইল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে গত শনিবার অজ্ঞাতনামা হিসাবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। ওই দিন পুলিশ কয়েকজন অজ্ঞাতনামাকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

এদিকে সামাজিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিহতের ছবি দেখে তার বড় ভাই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের মৃত জেলহক প্রামানিকের পুত্র হাফিজুর রহমান গত সোমবার মধুপুর থানায় এসে বোনের লাশ সনাক্ত করেন। তখন থানা পুলিশ নিশ্চিত হয় নিহতের নাম জাকিয়া সুলতানা রুপা (২৭)।

শোকাহত হাফিজুর রহমান গোপালপুর বার্তাকে জানান, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার কনিষ্ঠ রুপা ছিল খুবই মেধাবী ছাত্রী। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স করে ঢাকার আইডিয়াল ল কলেজে এলএলবি শেষ পর্বে পড়াশোনা করছিল। কিন্তু সংসারে অভাবঅনটনের দরুন বছর খানেক আগে ইউনিলিভার বাংলাদেশ নামক একটি বেসরকারি সংস্থায় সে চাকরি জুটিয়ে নেয়। শেরপুর জেলা শহরে কর্মরত ছিল সে। গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন (প্রভাষক) পরীক্ষায় অংশ নিতে শেরপুর থেকে বগুড়া যায় রুপা। ওই দিন পরীক্ষা শেষে বিকালে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী নিরাপদ পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) বাসে এক সহকর্মীর সাথে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। লক্ষ্য ছিল ময়মনসিংহে এক আত্মীয়ের বাসায় রাতে অবস্থান করে পরদিন ভোরে জরুরী ভিত্তিতে শেরপুর শহরের কর্মস্থলে ফিরবে। ওই সহকর্মী বগুড়া থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় এসে রুপার নিকট থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে অন্য গাড়িতে উঠে যায়।

এদিকে গত শনিবার সকালে কর্মস্থলে না পৌছায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর শেরপুর অফিস থেকে সহকর্মীরা রুপার বড় ভাই হাফিজুর রহমানের মোবাইলে তার অনুপস্থিতির বিষয়টি জানায়। রুপার সহকর্মীরা এক পর্যায়ে তার মোবাইলে রিং দিলে এক অপরিচিত যুবক ফোনটি রিসিভ করে এবং ময়মনসিংহ শহরে কেউ ভুল করে ফোনটি ফেলে রেখে গেছে জানিয়ে সুইচ অফ করে দেয়। এর আগে গত রবিবার হাফিজুর রহমান ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি জিডি করেন।

মধুপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, জাকিয়ার ভাইয়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাসের চালক হাবিব, সুপার ভাইজার সফর এবং হেলপার আকরাম, শামীম ও জাহাঙ্গীরকে গত সোমবার রাতে ময়মনসিংহ থেকে আটক করে। নিরাপদ পরিবহনের বাসটিও আটক করে পুলিশ। জাকিয়ার মোবাইলটিও উদ্ধার করা হয়। পুলিশ আরো জানায়, বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে কালিহাতির পর সব যাত্রী বাস থেকে নেমে যাওয়ায় রুপাতে একা পেয়ে তিন হেলপার তাকে উত্যক্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে ওই তিন হেলপার চলন্ত বাসেই তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। গাড়ির চালক ও সুপারভাইজার ধর্ষণ কাজে ওই তিনজনকে সহযোগিতা করে। রুপা বাধা দিলে তাকে বেদম মারধোর করা হয়। বাসটি মধুপুরের কাছাকাছি চলে আসলে রুপা ডাক চিৎকার শুরু করে। এতে বিপদ আচ করতে পেরে ধর্ষকরা তার ঘাড় মটকে দেয়। পরে শ্বাসরুদ্ধ করে গাড়ির মধ্যেই তাকে হত্যা করে। রুপার ভ্যানেটি ব্যাগে থাকা পাঁচ হাজার টাকা এবং মোবাইল সেট নিয়ে নেয় ধর্ষকরা। মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী না তুলে খালি বাসটি ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ সময়ে নিহতের মাথা থেতলে দেয়া হয়। পরে মধুপুর বনাঞ্চল পাড়ি দেয়ার সময় রুপার মরদেহ গাড়ি থেকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে চম্পট দেয় ধর্ষকরা।

আটককৃতদের মধ্যে হেলপার আকরাম, শামীম ও জাহাঙ্গীরকে গতকাল মঙ্গলবার টাঙ্গাইল আদালতে তারা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। চালক হাবিব এবং সুপারভাইজার সফর এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ সংবাদদাতা গোলাম মোস্তফা প্রতিবেদককে ফোনে জানান, নিহত রুপার আসানবাড়ি গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। শোকে কাতর স্বজন ও গ্রামবাসীর আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কর্মক্ষম উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের অকাল মৃত্যুতে দিশেহার হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের একটাই দাবি অপরাধীরা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!